একালের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংঘাত। এই সংঘাতের সঙ্গে অতীতকালের ইতিহাসের বহু ঘটনার মিল রয়েছে, এবং বহু সভ্যতার সঙ্গে এই বিচিত্র সংঘাতের প্রসঙ্গ অনুসরণ করা মানবেতিহাসের এক কৌতুকপ্রদ অভিজ্ঞতা। বর্তমান জগতের বিচিত্র সমস্যাবলির অনুধাবনকারী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ডক্টর টোয়েনবির দৃষ্টিভঙ্গি অভিনব ও অনন্যসাধারণ। তাঁর নিঃসীম দৃষ্টিতে স্থান কালের সীমারেখা নেই। শতাব্দী তাঁর চোখে এক দিনের মতো। এবং যুগ থেকে যুগান্তরে তিনি স্বচ্ছন্দে পরিক্রমা করে বিশ্বসংস্কৃতির রূপান্তর অনুধাবন করেন, বিশ্লেষণ করেন ও বিক্ষিপ্ত উপাদানগুলো সংক্ষিপ্ত করে কার্যকারণ বের করেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যসাধন করেন, অসঙ্গতির মধ্যে সঙ্গতিবিধান করেন। তাঁর গভীর জ্ঞান ও আশ্চর্য বিশ্লেষণী শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বল্প পরিসরে তথ্যবহুল ও তত্ত্বাশ্রয়ী ভাব প্রকাশের অপূর্ব দক্ষতা।
তিনি ইতিহাসের কাহিনীকার নন, রূপকার। উদার ও বাস্তব দৃষ্টি নিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার পতন অভ্যুদয় এবং বিশ্বসংস্কৃতির ক্রমিক বিবর্তনের বিচিত্র লীলা ব্যক্ত করেছেন দার্শনিক মন নিয়ে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। এজন্যেই টোয়েনবির ইতিহাস অধ্যয়ন চিত্তাকর্ষক ও তৃপ্তিদায়ক।
বাঙলা ভাষাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের নিকট তার পরিচয় দেওয়াই এই তর্জমা প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য।
আর্নল্ড টোয়েনবি (১৮৮৯-১৯৭৫) ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইজ্যান্টিয় ও আধুনিক গ্রিক ভাষা সাহিত্য ও ইতিহাসের কোরেইস্ অধ্যাপক (১৯১৯-১৯২৪); ১৯২৫ থেকে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক এবং ১৯৫৫ সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ইতিহাসে গবেষণা অধ্যাপক। ১৯৩৪ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত খণ্ডশ প্রকাশিত এ স্টাডি অব হিস্ট্রি তাঁর প্রধান গ্রন্থ।
আবদুল মওদুদ (১৯০৮-১৯৭০)। লেখক ও বিচারপতি। সুবক্তা ও মননশীল লেখক হিসেবে খ্যাত। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: প্রবন্ধ ও জীবনী ইসলাম ইউরোপকে যা শিখিয়েছে (১৯৪৭); কামেল নবী (১৯৪৯); মুসলিম মনীষা (১৯৫৫); শাহ আবদুল লতিফ ভেটাই (১৯৬৪); হজরত ওমর (১৯৬৭); মধ্যবিত্তের ক্রমবিকাশ: সংস্কৃতির রূপান্তর (১৯৬৯)। অনুবাদ – ভারতীয় মুসলমান (১৯৪৬); পৃথিবী ও পাশ্চাত্যজগৎ (১৯৬৪)। ছোটগল্প—ক্রিমিনাল (১৯৬৮)।