আলাস্কার ধু-ধু প্রান্তর, জনমানবহীন দুর্গম পথ আর পরিত্যক্ত সব শহর অভিযাত্রীদের জন্য রেখে দিয়েছে রোমাঞ্চ আর দুর্গমকে জয় করার হাতছানি। সাইকেলে বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে তিন বন্ধু (দুজন পুরুষ ও একজন নারী) সাড়া দিয়েছিলেন সে আহ্বানে। আলাস্কা থেকে টরোন্টো অভিযানের এই কাহিনি মুগ্ধ করবে পাঠকদের। অনায়াস গদ্যে তিনি বর্ণনা করেছেন এখনো অনেকটাই বুনো রয়ে যাওয়া এই অঞ্চলগুলোর কথা। সেখানে খাবারের লোভে ক্যাম্পের আশেপাশে ঘুরঘুর করে বিশালদেহী হিংস্র গ্রিজলি ভাল্লুক; প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে আমিষের চাহিদা মেটানো হয় মুজ শিকার করে।
পাঠক প্রতিটা পাতায় ঘরছাড়া সব মানুষ আর বুনো প্রকৃতির ছোঁয়া পাবেন। ঘাসের মাঝে উবু হয়ে জংলি স্ট্রবেরি খোঁজা যে মানুষটা সেই গহিন অরণ্যে দুবছর ধরে পায়ে হেঁটে ঘুরছেন, কিংবা জঙ্গল থেকে তুলে আনা শক্তি জোগানো বুনো ব্লুবেরি যে মানুষটি যেচে উপহার দিলেন অভিযাত্রীদের, তাঁদের কাহিনি পড়তে গিয়ে যে-কোনো পাঠকই পৃথিবীর পথে-পথে ছড়িয়ে থাকা এই আপনজনদের সন্ধানে নেমে পড়তে চাইবেন। জনমানবহীন প্রান্তরে এ অভিযানের টুকরো টুকরো সব গল্পে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয় ও আন্তরিকতার গভীর সব উপলব্ধি আমাদের হবে।
সব বয়েসি পাঠকের ভালো লাগার মতো একটি বই পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ: সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরোন্টো।
মুনতাসির মামুন জন্ম বগুড়ায় ১০ নভেম্বর ১৯৮২ সালে। পড়াশুনা করেছেন ঢাকার ধানমণ্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। ওশান কনজারভেন্সি এবং ব্যান্ফ মাউন্টেন ফিল্ম ফেস্টিভাল ওয়ার্ল্ড ট্যুর-এর বাংলাদেশ সমন্বয়ক ভ্রমণ, অভিযান ও পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি দুই দশকের বেশি সময় ধরে। পরিবেশ নিয়ে গবেষণা ও গণসচেতনতার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর 'কানেক্ট ফর ক্লাইমেট', ব্রিটিশ কাউন্সিলের 'ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন', আলোকচিত্রী হিসেবে আইইউসিএন-এর 'বায়োডাইভারসিটি ইন ফোকাস', 'ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটি' পুরস্কার লাভ করেছেন। আজীবন স্কাউট ও বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার'স অ্যাসোসিয়েশনের সভ্য। দেশে ও বিদেশে তাঁর তোলা আলোকচিত্রের ছয়টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্বতারোহণ নিয়ে প্রকাশিত তাঁর দুটি গ্রন্থ এভারেস্ট (২০০৫), দ্য টার্টেল নেক (২০০৮)।