বিখ্যাত ডাচ নৃবিজ্ঞানী ভেলাম ভান সেন্দেল লিখিত A History of Bangladesh বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অন্যতম পঠিত গ্রন্থ। প্রথাগত বর্ণ️নামূলক ইতিহাসের বই এটি একদমই নয়, পাঠক বরং এই বইতে বাংলাদেশকে চিনবেন ভূখণ্ডটির যাবতীয় জটিলতা, বৈচিত্র্য ও গতিশীলতা দিয়ে। বাংলাদেশকে বোঝার জন্য ভেলাম ভান সেন্দেল যেমন সমকালীন তথ্য ও তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন, তেমনই ভাষার সাবলীলতা ও উপস্থাপনার গুণে বইটি পড়ার অভিজ্ঞতাও দারুণ আনন্দময়।
বাংলাদেশের গত দুই হাজার বছরের পথপরিক্রমা মিলবে বইটিতে, পাশাপাশি এর ইতিহাসের জটিলতাও সমান গভীরতা নিয়ে এখানে উপস্থিত। বাংলাদেশের ভূগোল ও জলবায়ু এবং ঐতিহাসিক কালপর্ব️ ধরে প্রতিবেশী জনপদগুলোর প্রভাব কীভাবে এই দেশটিকে গড়ে তুলেছে, সেই ধারণা পাঠক এখানে পাবেন। পাশাপাশি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল, পাকিস্তানপর্ব️, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামসহ উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর পেছনের কার্য️কারণের বিশ্লেষণও বইটি থেকে জানা যাবে।
একটি দেশের বর্ত️মান অনেকাংশেই তার ইতিহাসের নির্ম️াণ। আজকের বাংলাদেশের নানান রাজনৈতিক, ধর্ম️ীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সংকটগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করবে এ গ্রন্থটি। বাংলাদেশটি কেন এমন তা যারা বুঝতে চান এবং পরিস্থিতিগত অজস্র বাধ্যবাধকতার মাঝে আটকে থাকা এই সংকীর্ণ️ ভূখণ্ডের অধিবাসীদের সংগ্রাম, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, গতিশীলতা ও ঘুরে দাঁড়ানোর রহস্য উপলব্ধি করতে চান—এমন প্রতিটি পাঠকের জন্য বইটি অবিকল্প।
ভেলাম ভান সেন্দেল এশিয়ার নৃতত্ত্ব এবং ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি নেদারল্যান্ডের ইরাসমুস ইউনিভার্সি️টি অফ রটরডামের তুলনামূলক ইতিহাস বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং পরবর্ত️ীতে আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক এশিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইউপিএল ইতিপূর্বে️ প্রকাশ করেছে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ Francis Buchanan in Southeast Bengal (১৭৯৮) ও এর বাংলা অনুবাদ দক্ষিণ—পূর্ব️ বাংলায় ফ্রান্সিস বুকানন (১৭৯৮)। উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সিস বুকাননের মৃত্যুর দেড়শ বছরেরও বেশি সময় পরে বাংলাদেশ বিষয়ক এই অসামান্য পাণ্ডুলিপিটি সেন্দেল প্রয়োজনীয় টীকাভাষ্যসহ সম্পাদনা করেছিলেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলোর মধ্যে Peasant Mobility: The Odds of Life in Rural Bangladesh (1981), The Chittagong Hill Tracts: Living in a Borderland (২০০০) ইত্যাদি। এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, ধর্ম️ ও জনজীবন তাঁর মনোযোগের কেন্দ্র।