বাঙালীর জাতীয়তাবাদ
https://uplbooks.com/shop/9789845060622-11574 https://uplbooks.com/web/image/product.template/11574/image_1920?unique=56f7a2e
Language: Bangla |
Tags :
Book Info
জাতীয়তাবাদের পক্ষে যেমন বিপক্ষেও তেমনি অনেক কিছু বলার আছে, এবং থাকবে। জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেম এক বস্তু নয়; জাতীয়তাবাদ আরো বেশি রাজনৈতিক। বাঙালীর জাতীয়তাবাদ ভাষাভিত্তিক, এবং আত্মরক্ষামূলক। কথা ছিল জাতীয়তাবাদ বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করবে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। না-ঘটার কারণ হচ্ছে বৈষম্য। বৈষম্যের মুখ্য প্রকাশগুলোর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণীবিভাজন। সাম্প্রদায়িক কারণে বাংলা বিভক্ত হয়েছে, পরে প্রতিষ্ঠা ঘটেছে বাংলাদেশের, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশেও সব বাঙালী যে ঐক্যবদ্ধ তা নয়, এখানে ঐক্যের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে রয়েছে শ্রেণী-দূরত্ব। ঐক্যের অন্তরায়গুলোকে চিহ্নিত করাই এই বইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য। অনৈক্য সৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তদুপরি জাতীয়তাবাদ নিজেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত; সে-কারণে রাজনীতির আলোচনা নিয়েই বইয়ের দীর্ঘতম পরিচ্ছেদ। বৈষম্য রয়েছে অর্থনীতিতে, শিক্ষায়, নারীর অবস্থানে। ভাষার দায় ও দায়িত্ব ছিল ঐক্য গড়ায় সাহায্য করা; কিন্তু ভাষা সে-কাজ করতে পারেনি। প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় বাঙালী মধ্যবিত্তের অপারগতাও অনৈক্য সৃষ্টির কারণ বটে। আমলাতন্ত্র বৈষম্যকে পুষ্ট করেছে, এবং দায়িত্ব নিয়েছে তার সংরক্ষণের। বাংলা ও বাঙালীর জীবনে আঞ্চলিক পার্থক্যও অসত্য ছিল না। এই বিষয়গুলোর প্রত্যেকটির ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। বাঙালীর ঐক্য-অনৈক্য সৃষ্টির ইতিহাসে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধারার তিন প্রতিনিধি—মেকওলে, বিদ্যাসাগর ও বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে। সর্বনাম কিভাবে বাঙালীর সঙ্গে বাঙালীর দূরত্বের স্মারকচিহ্ন হিসাবে কাজ করেছে সেটি দেখানো হয়েছে আরেকটি পরিচ্ছেদে। অবতরণিকা থেকে শুরু করে উপসংহার পর্যন্ত আসলে একটিই পর্যালোচনা, যেটিকে ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ইংরেজ আগমনের পর থেকে; বইয়ের কাহিনীর সূত্রপাতও সেখান থেকেই; শেষ হয়েছে সাম্প্রতিক কালে এসে। যে বক্তব্যটি প্রচ্ছন্নভাবে অধিকাংশ সময়ে এবং কখনো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা হলো ঐক্যের সকল আয়োজনের আড়ালে জাতিগঠনের পরিবর্তে শ্রেণীগঠনের কাজটাই ঘটেছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জ. ১৯৩৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তাঁর শিক্ষাজীবনের বেশির ভাগ কেটেছে ঢাকায়, কিছুটা ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি মূলত প্রবন্ধ লেখক, এবং তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য যে অনানুষ্ঠানিকতা, প্রবহমানতা ও যুক্তিযুক্ততা তা এই বইতে আছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাঙালীর ঐক্যের প্রশ্নে তাঁর গভীর আগ্রহ, কৌতূহল ও তথ্যানুসন্ধান। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় একশত।