সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যখন সারা উপমহাদেশকেই ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে, প্রতিটি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সে কালবেলায় দাঁড়িয়ে দেশের বর্ষীয়ান প্রকৌশলী ও খ্যাতনামা বাস্তুকলাবিদ এ লেখক নিশ্চুপ থাকতে পারেননি। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসন্ধান করেছেন এ সাম্প্রদায়িকতার প্রকৃত স্বরূপ। যেহেতু এ ভূখণ্ডটি উপমহাদেশেরই অংশ ছিল, তাই তিনি এর ইতিহাসটিকে টেনেছেন সেই অতীত থেকে বর্তমান কাল অবধি।
অভিজ্ঞতা, দীর্ঘ অনুশীলন ও পর্যবেক্ষণের ফল এ গ্রন্থ। এতে অতীতের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে। মূলত সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি থেকে কালের ঘটনাপ্রবাহে এর লালন-পালন আর তার বিকাশ-বিস্তৃতিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। বিপুল নির্ভরযোগ্য তথ্যের সমাহারে গ্রন্থটি কৌতূহলী বৃহত্তর পাঠকের উপযোগী হয়ে উঠেছে।
অনাড়ম্বর বর্ণনায় সহজ ও সরল ব্যাখ্যায় বিভেদবয়ান উদ্দীষ্ট পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে আদৃত হবে – এমনটি আশা করা যায়। গবেষণার সকল প্রক্রিয়া ও শর্ত পালনের জন্য এটি এ দেশের সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ক একটি নির্ভরযোগ্য সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হিসেবেও স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখে।
সুভাষ ঘোষ (১৯৪৩) পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার হাসানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করার পর চাকরি-জীবন মাত্র পাঁচ বছরের। তারপর সুদীর্ঘ সাড়ে চার দশকের উপর নির্মাণ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড বিল্ডার্স কর্পোরেশন লিমিটেড (এবিসি)-এর চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত।
দীর্ঘ পঁচাত্তর বছরের জীবনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সাতচল্লিশের দেশভাগকালে প্রতিবেশি ও স্বজনদের দেশত্যাগ দেখেছেন খুব ছোটবেলায়। কলেজ-জীবনে নিজের চোখে দেখেছেন পাকিস্তান সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা - প্রথমে বাষট্টিতে পাবনা শহরে এবং পরে চৌষট্টিতে ঢাকা শহরে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দুঃখজনক রাজনৈতিক পালাবদলগুলোকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন।
এতোকিছুর পরও কখনও দেশত্যাগ করার কথা ভাবেননি। ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াশুনা করালেও তাদেরকে দেশে স্থিত হতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সারা